ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে খরচ বর্তমান যুগে ব্যবসা ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনে ই-কমার্স হয়ে উঠেছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মানুষ এখন ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিতে চাইছে, আর সেই চাহিদা পূরণে উদ্যোক্তারা ঝুঁকছেন ই-কমার্স সাইট নির্মাণের দিকে। কিন্তু সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো: “একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে কত খরচ পড়ে?”
এই আর্টিকেলে আমরা খুঁটিনাটি সব বিষয়ে আলোচনা করব—কোন কোন খাতে খরচ হয়, তার আনুমানিক পরিমাণ কত, কোন ক্ষেত্রে আপনি খরচ কমাতে পারবেন, আবার কোথায় অতিরিক্ত খরচ করাটাই লাভজনক।
ই-কমার্স ওয়েবসাইট খরচের মূল উপাদানসমূহ
ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরির সময় সাধারণত ৮টি খাতে খরচ হয়ে থাকে:
ডোমেইন নাম
ওয়েব হোস্টিং
ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম (CMS/Framework)
পেমেন্ট গেটওয়ে সংযোগ
প্রিমিয়াম ফিচার ও প্লাগইন
গ্রাফিক ডিজাইন ও ফটোগ্রাফি
মার্কেটিং ও রক্ষণাবেক্ষণ
এখন চলুন প্রতিটি উপাদান নিয়ে বিস্তারিত জানি।
১. ডোমেইন নাম
হলো আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানা—যেমন www.yourshop.com। এটি বছরে একবার নবায়ন করতে হয়।
.com ডোমেইন: ৳১,০০০ – ৳২,০০০/বছর
.bd ডোমেইন (BTCL): ৳৮০০ – ৳১,২০০/বছর
সাশ্রয়ী পরামর্শ: প্রথম বছর ছাড়পত্র দিয়ে অনেকে ফ্রি ডোমেইন দিয়ে থাকে (যেমন Hostinger, Bluehost)।
২. ওয়েব হোস্টিং
আপনার ওয়েবসাইটের ফাইল যেখানে রাখা হবে, সেটিই হোস্টিং। ভালো হোস্টিং মানেই দ্রুত লোড টাইম ও উন্নত সিকিউরিটি।
Shared Hosting: ৳৩,০০০ – ৳৮,০০০/বছর
Cloud Hosting: ৳৮,০০০ – ৳১৫,০০০+
VPS Hosting: ৳১৫,০০০ – ৳৫০,০০০+
জনপ্রিয় হোস্টিং কোম্পানি: ExonHost, BDWEBIT, Hostinger, Oudel, SiteGround, Bluehost
সাশ্রয়ী পরামর্শ: শুরুতে Shared Hosting যথেষ্ট, তবে স্কেলিং হলে Cloud বা VPS বিবেচনা করুন।
৩. ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট
এটি আপনার সাইটের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
Freelancer দিয়ে WordPress Site: ৳১০,০০০ – ৳৩০,০০০
Agency থেকে প্রফেশনাল Custom Site: ৳৫০,০০০ – ৳২,০০,০০০+
Shopify ব্যবহার করলে মাসিক সাবস্ক্রিপশন: $29 – $299
সাশ্রয়ী পরামর্শ: WordPress + WooCommerce ব্যবহারে খরচ অনেকটাই কমে যায়।
৪. ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন
WooCommerce (WordPress): ফ্রি, তবে কিছু প্রিমিয়াম এক্সটেনশন লাগতে পারে
Shopify: মাসিক ফি (প্রাথমিক $29/মাস)
Magento বা Laravel (Custom): উন্নত তবে ব্যয়বহুল
WooCommerce নবীনদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ও সাশ্রয়ী।
৫. পেমেন্ট গেটওয়ে সংযোগ
বাংলাদেশে ই-কমার্স ওয়েবসাইটে পেমেন্ট গেটওয়ে যুক্ত করতে হয় যাতে গ্রাহক বিকাশ, কার্ড বা ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারে।
SSLCommerz, ShurjoPay, AamarPay:
সেটআপ চার্জ: ৳০ – ৳১৫,০০০
প্রতি ট্রানজেকশনে ২%-৩.৫% চার্জ
সাশ্রয়ী পরামর্শ: SSLCommerz-এর অনেক প্যাকেজে ফ্রি সেটআপ অফার থাকে।
৬. প্রিমিয়াম থিম ও প্লাগইন
ই-কমার্স সাইটে নানা রকম ফিচার দরকার হয়—ফিল্টার, রিভিউ সিস্টেম, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাক্ট ভেরিয়েশন ইত্যাদি।
থিমফরেস্ট থিম: ৳৫,০০০ – ৳১০,০০০ (এককালীন)
প্রিমিয়াম প্লাগইন: ৳১,০০০ – ৳১০,০০০+
সাশ্রয়ী পরামর্শ: ভালো ফ্রি থিম যেমন Astra, OceanWP; ফ্রি প্লাগইন যেমন WooCommerce, WPForms দিয়েই শুরু করা যায়।
৭. ফটোগ্রাফি ও গ্রাফিক ডিজাইন
একটি ই-কমার্স সাইটে প্রোডাক্ট ইমেজই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া লোগো, ব্যানার, স্লাইডার লাগবে।
লোগো ডিজাইন: ৳১,০০০ – ৳৫,০০০
প্রোডাক্ট ফটোশ্যুট: ৳৫,০০০ – ৳৩০,০০০+
ব্যানার/গ্রাফিক্স: ৳২,০০০ – ৳১০,০০০+
সাশ্রয়ী পরামর্শ: শুরুতে মোবাইল ও লাইট ব্যবহার করে ছবি তোলা যায়, ফ্রিল্যান্সার দিয়ে ডিজাইন সস্তায় করানো যায়।
৮. মার্কেটিং ও রক্ষণাবেক্ষণ
ওয়েবসাইট তৈরি করেই শেষ নয়। গ্রাহক আনতে হলে মার্কেটিং জরুরি। পাশাপাশি সাইট মেইনটেনেন্সও করতে হয়।
Facebook & Google Ads: ৳৫,০০০ – ৳৫০,০০০+ প্রতি মাস
SEO ও কনটেন্ট মার্কেটিং: ৳৫,০০০ – ৳২৫,০০০+
Maintenance/Update: ৳১,০০০ – ৳১০,০০০+ প্রতি মাস
সাশ্রয়ী পরামর্শ: আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জানেন, তাহলে নিজের ব্যবসা নিজেই প্রচার করতে পারেন।
সংক্ষিপ্ত বাজেট বিশ্লেষণ (বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে)
খরচের খাত | আনুমানিক খরচ (৳) |
---|---|
ডোমেইন | ১,০০০ – ২,০০০ |
হোস্টিং | ৩,০০০ – ৮,০০০ |
ওয়েব ডিজাইন/ডেভেলপমেন্ট | ১০,০০০ – ৫০,০০০+ |
থিম/প্লাগইন | ৫,০০০ – ২০,০০০ |
পেমেন্ট গেটওয়ে | ০ – ১৫,০০০ |
ফটো ও গ্রাফিক্স | ৫,০০০ – ২০,০০০ |
মার্কেটিং ও SEO | ৫,০০০ – ৫০,০০০+ (ঐচ্ছিক) |
রক্ষণাবেক্ষণ | ১,০০০ – ১০,০০০+/মাস |
👉 মোট খরচ (শুরুতে):
সাশ্রয়ী বাজেট: ৳২৫,০০০ – ৳৫০,০০০
মধ্যম বাজেট: ৳৫০,০০০ – ৳১,০০,০০০
উন্নত বাজেট: ৳১,০০,০০০ – ৳২,০০,০০০+
উপসংহার
ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে খরচ নির্ভর করে আপনার ব্যবসার স্কেল, ফিচার এবং কাস্টমাইজেশনের ওপর। একজন নতুন উদ্যোক্তা চাইলে স্বল্প বাজেটে WordPress এবং WooCommerce ব্যবহার করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অন্যদিকে, যাঁরা দ্রুত স্কেল করতে চান বা বড় পরিসরে ব্যবসা করতে চান, তাঁদের উন্নত ফিচারসহ ওয়েবসাইটের জন্য বড় বাজেট প্রস্তুত রাখা উচিত।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আপনার ই-কমার্স সাইট যেন দ্রুত, ইউজার-ফ্রেন্ডলি ও নিরাপদ হয়।