Skip to content

ই-ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধা

  • by
ই-ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধা

ই-ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধা তাদের কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করছে, যাকে বলা হয় ই-ব্যবসা বা ই-বিজনেস (E-Business)। ই-কমার্স (E-Commerce) এর বিস্তৃত রূপ হলো ই-বিজনেস, যেখানে শুধু পণ্য ক্রয়-বিক্রয় নয়, বরং ব্যবসার অন্যান্য কার্যক্রম যেমন মার্কেটিং, কাস্টমার সার্ভিস, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদিও ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

ই-ব্যবসা আধুনিক সমাজে এক বিপ্লব নিয়ে এসেছে, তবে এর যেমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা আছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। নিচে আমরা ই-ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধাগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

ই-ব্যবসার সুবিধাসমূহ

১. খরচ কম

ই-ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য আলাদা করে বিশাল একটি অফিস বা দোকান ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। অনেক সময় একটি ওয়েবসাইট কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের মাধ্যমেই ব্যবসা শুরু করা যায়। ফলে ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন ইত্যাদি খরচ অনেকাংশে কমে যায়।

২. সময় ও স্থান নিরপেক্ষতা

ই-ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি ২৪ ঘণ্টা এবং সপ্তাহের ৭ দিন চালানো যায়। ক্রেতা যে কোনো সময়, যেকোনো স্থান থেকে পণ্য দেখতে ও অর্ডার করতে পারেন। ফলে ব্যবসায়ীরা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের বা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে তাদের পণ্য পৌঁছে দিতে পারেন।

৩. বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ

ই-ব্যবসার মাধ্যমে একজন ছোট উদ্যোক্তাও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে পারে। অনলাইনে ওয়েবসাইট, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্য বিদেশে পাঠানো সম্ভব হয়, যা আগে কেবল বড় কোম্পানিগুলোর পক্ষেই সম্ভব ছিল।

৪. দ্রুত এবং স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম

ই-ব্যবসার মাধ্যমে অর্ডার গ্রহণ, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট, পেমেন্ট প্রসেসিং ইত্যাদি কাজগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা যায়। এতে করে ব্যবসার গতি বেড়ে যায় এবং ভুলের পরিমাণও কমে যায়।

৫. গ্রাহক সম্পর্ক উন্নয়ন

ই-ব্যবসার মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রোফাইল, আগ্রহ, কেনাকাটার ইতিহাস বিশ্লেষণ করে তাদের জন্য কাস্টমাইজড অফার ও সেবা প্রদান করা যায়। এতে করে গ্রাহক সন্তুষ্টি ও বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি পায়।

৬. পরিবেশ বান্ধব

প্রথাগত ব্যবসার তুলনায় ই-ব্যবসা অনেক বেশি পরিবেশ বান্ধব। কারণ এতে করে কাগজের ব্যবহার কম হয়, ভ্রমণ কম হয় এবং সরাসরি শারীরিক অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা কমে যায়।

ই-ব্যবসার অসুবিধাসমূহ

১. প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা

ই-ব্যবসার সফলতা সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট না থাকলে বা ওয়েবসাইটে কোনো কারিগরি সমস্যা হলে পুরো ব্যবসা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।

২. সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি

অনলাইন লেনদেনের কারণে হ্যাকারদের আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য, ক্রেডিট কার্ড তথ্য ইত্যাদি চুরি হতে পারে, যা ব্যবসার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে পারে।

৩. পণ্য না দেখে কেনা

অনলাইনে ক্রেতারা পণ্য হাতে নিয়ে দেখতে পারেন না, কেবল ছবি ও বিবরণ দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ফলে অনেক সময় পণ্য হাতে পেয়ে তা প্রত্যাশার সাথে মিল না খাওয়ায় হতাশা সৃষ্টি হয়।

৪. প্রতিযোগিতা বেশি

ই-ব্যবসায় প্রবেশ করার বাধা কম হওয়ায় অনেকেই এই খাতে প্রবেশ করছে। ফলে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে। একসাথে হাজারো দোকান অনলাইনে উপস্থিত থাকায় গ্রাহক ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়।

৫. ডেলিভারি সমস্যা

অনেক সময় পণ্যের ডেলিভারিতে বিলম্ব হয় বা ভুল পণ্য পাঠানো হয়। কিছু ক্ষেত্রে দূরবর্তী অঞ্চলে ডেলিভারি দিতে সমস্যা হয়, যা গ্রাহক অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে।

৬. আইনগত জটিলতা

ই-ব্যবসা সংক্রান্ত স্পষ্ট আইন না থাকায় অনেক সময় বিক্রেতা ও ক্রেতার মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। বিশেষ করে বিদেশি গ্রাহকদের সাথে লেনদেনে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

উপসংহার

ই-ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধা আধুনিক প্রযুক্তির একটি অনন্য উপহার, যা ব্যবসা পরিচালনার পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এটি ব্যবসাকে সহজ, দ্রুত এবং বিস্তৃত করেছে। তবে এর পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকিও রয়েছে, যা উদ্যোক্তাদের সচেতনভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

উন্নত সাইবার নিরাপত্তা, গ্রাহক সেবা, দ্রুত ডেলিভারি সিস্টেম এবং সঠিক আইনগত কাঠামো গড়ে তুললে ই-ব্যবসা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও এক বিরাট সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।
তাই, প্রযুক্তির সুফলকে কাজে লাগিয়ে এই খাতে দক্ষতা অর্জন এবং গুণগত মান বজায় রাখা আমাদের সকল উদ্যোক্তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।